জীবন দিয়ে ভালবাসার প্রমাণ |
আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারি।আগামীকাল "বিশ্ব ভালোবাসা দিবস"...সব প্রেমিক-প্রেমিকাদের কত প্ল্যান এই দিনটা নিয়ে। সাদিয়া আর রাফি প্ল্যান করে আগামীকাল সারাদিন একসাথে ঘুরবে। তাই ক্যাম্পাসে বেশিক্ষণ না থেকে বাড়ি চলে আসে ওরা....
.
রাত ১২.০০টা।একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে মেসেজ আসে সাদিয়ার ফোনে।মেসেজে লেখা"দরজাটা খোল"!
সাদিয়া ভাবে হয়তো ভুল করে তার নাম্বারে মেসেজটা চলে এসেছে।কিন্তু কিছুক্ষণ পর আরেকটা মেসেজ আসলো! তাতে লেখা"ভয় পাসনা,দরজাটা খোল!"..এবার সাদিয়া কিছুটা বিরক্তি নিয়ে দরজা খুললো। দরজা খুলে সাদিয়া দেখলো দরজার সামনে একটা কাগজের টুকরা পড়ে আছে। সাদিয়া এবার কিছুটা এক্সাইটেড হয়ে কাগজের টুকরাটা হাতে নিল যেখানে লেখা"একবার ছাদে আসতে পারবি?"...সাদিয়া কি মনে করে যেন ছাদের দিকে আগাতে থাকে। ছাদে পৌঁছে সাদিয়া তো পুরা থ হয়ে গেছে!!.সে নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছেনা!
ছাদের উপর হাজার হাজার কাগজের খামে লেখা "ভালোবাসি"....
অচেনা নাম্বার থেকে আরেকটা মেসেজ এসেছে"ভালোবাসি, ভালোবাসি এবং ভালোবাসি!"...
এভাবে কেউ সারপ্রাইজ দেবে সাদিয়া কখনোই ভাবেনি।সাদিয়া মনে মনে ভাবছে রাফি ছেলেটা আসলেই একটা পাগল নাহলে এভাবে কেউ পাগলামী করে!!..
.
১৪ই ফেব্রুয়ারি, সকাল ১০.০০টা।
.
--হ্যালো!আপনি কি সাদিয়া বলছেন??(ফোনের ওপাশ থেকে)
--হ্যাঁ বলছি..(সাদিয়া)
--আসলে................
--কিইইইহহহ...........
.
সাদিয়া এখন হসপিটালে বসে আছে।ফোনটা হসপিটাল থেকেই এসেছিল।রাফির বাইক এক্সিডেন্ট হয়েছে!!
সাদিয়ার সাথে দেখা করতেই আসছিল রাফি।ভালোবাসা দিবসের জন্য কত প্ল্যান ছিল দুজনার অথচ সবকিছুই শেষ হয়ে গেল।
রাফির অবস্থা খুবই খারাপ।রাফির বাবা-মা ও বন্ধুরা সবাই চলে এসেছে।সবার চোখেই জল।ডাক্তার বলেছে বাঁচানো কঠিন। প্রচুর পরিমাণে ব্লিডিং হচ্ছে, মাথা এবং উদরের পেছনের অংশে যেখানে কিডনি থাকে সেই জায়গাটাতে মারাত্মক আঘাত লেগেছে।
.
--ডাক্তার সাহেব এখন রোগীর কি অবস্থা? (রাফির বাবা)
--দেখুন রোগীর আঘাতটা খুবই গুরুতর।রিপোর্ট হাতে পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।(ডাক্তার)
--আমার ছেলে ঠিক হয়ে যাবে তো?(কান্নাজড়িত কণ্ঠে)
--প্লিজ কাঁদবেননা।আল্লাহকে ডাকুন আর আমাদের চেষ্টার কোন ত্রুটি হবেনা।
.
রিপোর্ট চলে এসেছে।রাফির দুই চোখ এবং দুইটা কিডনিই নষ্ট হয়ে গেছে।যদিও এক্সিডেন্টে দুই কিডনিই নষ্ট হওয়া খুবই রেয়ার ঘটনা। রাফির ভাগ্যটা হয়তো খারাপ ছিল!!
.
লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে রাফিকে। ডাক্তার বলেছে ২ ঘন্টার মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে নাহলে রাফিকে বাঁচানো যাবেনা।সবাই যার যার মত চেষ্টা করছে কিন্তু কিডনি পাওয়া তো এত সহজ না।আর কিডনি পেলেই শুধু হবেনা রক্তের গ্রুপও মিলতে হবে!!
.
রাফির মা কয়েকবার জ্ঞান হারিয়েছেন,সাদিয়াও প্রায় পাগল হয়ে গেছে।ভালোবাসার মানুষটাকে বাঁচানোর শেষ চেষ্টাটুকু করছে।
দিনা,তুর্য,হাফসা সবাই পাগলের মত কিডনির খোঁজ করছে কিন্তু কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা।
.
--সবার জন্য একটা খুশির খবর আছে।কিডনি পাওয়া গেছে! সাথে চোখও!(ডাক্তার)
--আলহামদুলিল্লাহ্(সবাই একসাথে)
--আপনাদের ভাগ্য সত্যিই অনেক ভালো নাহলে এত কম সময়ে কিডনি ও চোখ পাওয়া অসম্ভব ব্যাপার।বাংলা সিনেমায় এরকম কাহিনী ঘটে কিন্তু বাস্তবে এই প্রথম দেখলাম!
--ডাক্তার সাহেব কে সেই মহান ব্যক্তি?আমরা কি তাকে দেখতে পারবো একবার?(রাফির মা)
--না,উনি কাউকে দেখা দেবেননা।এখন।অপারেশন শুরু হবে সবাই দোয়া করুন যাতে সফলভাবে অপারেশন শেষ হয়।
.
হ্যাঁ,জীবনতো এরকমই হয়!কখনো কখনো জীবন সিনেমার চাইতেও বেশি সিনেমাটিক হয়ে যায়।নাহলে এত কম সময়ে কিডনি পাওয়া কখনোই সম্ভব হতোনা।
রাফির অপারেশন সফলভাবেই শেষ হয়।সাদিয়ার ভালোবাসা হারিয়ে যায়নি।ভাগ্যদেবীর সহায়তায় রাফি বেঁচে গেছে!