জীবন দিয়ে ভালবাসার প্রমাণ |
See Part-1: [Click Here] 👈
প্রায় ১০ দিন পর আজকে ভার্সিটিতে এসেছে সাদিয়া,তুর্য,দিনা এবং হাফসা।রাফি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছে।কিন্তু মাহিনের কোন খবরই নেই।রাফিকে দেখতে হাসপাতালে পর্যন্ত আসেনি। সাদিয়াও রাগে আর ফোন দেয়নি।
.
ক্লাস শেষে আড্ডা দিচ্ছে সবাই।অনেকদিন আড্ডা দেওয়া হয়না। হঠাৎ একটা ছেলে আসলো ওদের কাছে।হাতে একটা ডাইরি।
--আপনাদের মধ্যে সাদিয়া আপু কে??(ছেলেটা)
--আমিই সাদিয়া,
--ও..এইটা আপনার জন্য।মাহিন ভাই দিতে বলেছে।
.
আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় ছেলেটা।
মাহিনের নাম শুনে কিছুটা অবাক হয় সাদিয়া।আবার কিছুটা রাগও হয়।ভাবে এতদিন খোঁজ না নিয়ে এখন ডাইরি পাঠিয়ে ভাব মারছে।অকৃতজ্ঞ কোথাকার!
ডাইরিটা হাতে নিয়ে পড়তে শুরু করে সাদিয়া।আর বাকীরা নিশ্চুপ শ্রোতার মত শুনতে থাকে।ডাইরীর প্রথমে বড় করে একটা শিরোনাম আছে"কাগজে মোড়ানো ভালোবাসা".....
.
@আজ ভার্সিটির ১ম দিন।স্যারের অদ্ভুতুড়ে পরিচয় পর্বটা ভালোই লাগলো।মজার ব্যাপার হল "স" দিয়ে একটা মেয়ের নাম আছে"সাদিয়া"।মজার ব্যাপার বলছি কারন "স" অক্ষরটা আমার খুব প্রিয়।মেয়েটাকে আড়চোখে একবার দেখলাম! কত্ত কিউট!তাই ভাবলাম একটু রাগিয়ে দেই।প্রথম পরিচয়ে তুই করে বলাতে মেয়েটা যা ঘাবড়ে গেছে হাহাহা।এরপর যখন পেত্নী বললাম মেয়েটার সেকি রাগ!!
.
@মেয়েটা আমাকে দেখলেই এত রাগ করে কেন??..বন্ধুর সাথে কেউ এমন ব্যবহার করে?ভুলে নাহয় একবার পেত্নী বলেই ফেলেছি!
.
@তুর্য,দিনা,হাফসা আর রাফি সবার সাথেই আজকে বন্ধুত্ব করে ফেললাম শুধু সাদিয়ার সাথেই বন্ধুত্বটা হলোনা।
.
@আজকে সাদিয়াকে রিকশা করে বাড়িতে পৌঁছে দিলাম যদিও আমার বাড়ি ওই রাস্তায় না।বন্ধুকে সাহায্য করার জন্য এইটুকু তো করাই যায়!
.
@আমি আজকে অনেক খুশি কারণ সাদিয়া আজ আমার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করেছে।
ডাইরির পাতা ওল্টাতে থাকে সাদিয়া....হঠাৎ একটা লেখায় চোখ আটকে যায়!
.
@কালকে ইয়ার ফাইনাল পরীক্ষা আর পেত্নীটার টাইফয়েড হয়েছে।সবাই সান্ত্বনা দিতে ব্যস্ত আর আমি আমার প্ল্যান নিয়ে!যে করেই হোক পরীক্ষাটা আটকাতেই হবে।
.
@উফফ! যা ধকল গেছে গতরাতে..প্রাচীর টপকে পরীক্ষার জিনিসপত্রে আগুন দেওয়া তো আর চারটেখানি কথা না!তারপরেও ভালো লাগছে এইটা ভেবে যে পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে!সাদিয়ার বছরটা আর লস দেওয়া লাগবেনা।
.
আরও কয়েকটা পেইজ পড়ে সাদিয়া আর অন্যরা অবাক হয়ে শুনে যাচ্ছে।এবার একটু বেশিই অবাক হয় সাদিয়া!
.
@আমি মনে হয় সাদিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছি!..কিন্তু কথাটা ওকে বলবো কিভাবে?
.
@কাল যেভাবেই হোক সাদিয়াকে বলতেই হবে।ভালোবাসার কথা বলে দিতে হয়...
.
@সাদিয়াকে প্রোপোজটা আর করা হলোনা।রাফিও নাকি সাদিয়াকে ভালোবাসে!আরে ব্যাপার না রাফি তো আমারই বন্ধু!সাদিয়ার সাথে ভালোই লাগবে ওকে।আমি নাহয় দূর থেকেই ভালোবাসবো!
.
@মামাটা আজকে মারা গেল!আচ্ছা হার্ট অ্যাটাক হলেই কি মরতে হবে??সবাই এত স্বার্থপর কেন?আমি যে বড় একা হয়ে গেলাম।
.
@৫ দিন পর ভার্সিটি আসলাম।কিন্তু ক্লাস করিনি।বৃষ্টির মধ্যে সাদিয়াকে দেখলাম ছাতা ছাড়া হাঁটতে!ছাতা নিয়েই দৌড় দিলাম।ভালোবাসার মানুষটাকে ভিজতে দেই কিকরে?যদি অসুখ হয়ে যায়!!
.
@সবার থেকেই নিজেকে গুটিয়ে ফেলছি এখন...যখন মায়া বাড়িয়ে লাভ হয়না তখন মায়া কাটাতে শিখতে হয়।
.
সাদিয়া যতই পড়ছে ততই অবাক হচ্ছে।অবাক হচ্ছে বাকী সবাই!! আর মাহিন এখন কোথায়??
.
@আজকে মনটা খুব খারাপ।সাদিয়ার এক্সিডেন্ট হইছে।ওকে হসপিটালে ভর্তি করেই রাফিকে ফোন দিলাম যাতে সাদিয়া ভাবে রাফি সাদিয়াকে হসপিটালে নিয়ে এসেছে!
.
@রাফি আর সাদিয়ার ভালোবাসাটা হয়েই গেল অবশেষে।আমি অনেক খুশি।
.
একটু দম নিয়ে আবার পেইজ ওল্টায় সাদিয়া....
.
একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি??.. তুই কি কখনো, কোনদিন আমার মন বুঝিসনি???উত্তরটা তোর কাছেই রেখে দিস...যদিও উত্তরটা তুই দিতে পারবিনা!হৃদয় দিয়ে লেখা প্রশ্নের উত্তর হৃদয় দিয়েই দিতে হয়,,বুদ্ধি দিয়ে নয়।
.
সত্যিকারের ভালোবাসাগুলো মন দিয়ে হয় কিন্তু প্রমাণ করতে হয় জীবন দিয়ে।ভালোবাসলে ভালোবাসার মানুষকে জানিয়ে দিতে হয় আর আমি বোধহয় এ জায়গাটাতেই ব্যর্থ ছিলাম...
আমার ভালোবাসা ছিল একটা কাগজে মোড়ানো ভালোবাসা,,যার অস্তিত্ব শুধু কাগজের কয়েকটা পাতাতেই সীমাবদ্ধ।
.
কাগজে মোড়ানো ভালোবাসা দিয়ে আমি তোর হৃদয় মোড়াতে চেয়েছিলাম।কিন্তু তুই অধরাই থেকে গেলি...
.
তুইতো আমার হাতছোঁয়া দূরত্বে ছিলি কিন্তু হাত বাড়ালেই সবসময় ভালোবাসা ছোঁয়া যায়না। কিছু ভালোবাসা অপূর্ণই রয়ে যায়..
ভালোবাসার মানুষকে পেয়েও হারানোর নাম বেদনা,,না পেয়ে ভুলে যাওয়ার নাম সান্ত্বনা আর ভালোবাসার মানুষকে না পেয়েও সারা জীবন ভালোবেসে যাওয়ার নাম স্বার্থকতা।
আমি স্বার্থক....
.
আমি তোর মাঝে আমার জগৎটাকে খুঁজেছিলাম আর তুই রাফির মাঝে এতে তো আমাদের কোন হাত ছিলনা..কিছু গল্প বিধাতা নিজ হাতে লেখে!!.. নিজেকে কখনো অপরাধী ভাবিসনা কিন্তু... রাফিকে কখনো কষ্ট দিসনা...ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে...
.
এতগুলো অপূর্ণতার মাঝেও আমার একটা পূর্ণতা আছে আর তা হল রাফির দেওয়া যে গল্পগুলো তোকে আবেগে ভাসাতো সেগুলো আমারই লেখা ছিল...এজন্য রাফিকে কিছু বলিসনা কিন্তু.. সবার দ্বারা গল্প লেখা হয়না!.. গল্প লিখতে গেলে আমার মতই পাগল হওয়া লাগে...
গল্প লিখতে হয় আবেগ দিয়ে..কারণ আবেগ দিয়ে জীবন না চললেও হৃদয় চলে!
.
তোকে বলেছিলামনা আমার লেখা পড়েও একদিন তুই কাঁদবি!আমার অব্যক্ত ভালোবাসার কসম করে বলছি তুই এখন কাঁদছিস...এই পাগলী! একদম কাঁদবিনা,আমি আছি তো।আমি তোর ছায়া হয়ে তোর সাথেই আছি শুধু স্পর্শের বাইরে।নিজের জীবনটা রাঙিয়ে নিস ভালোবাসার রঙে...
আমার শেষ একটা আবদার রাখবি সাদিয়া??..প্রতি ১৪ই ফেব্রুয়ারি আমার কবরে একটা করে গোলাপ ফুল রেখে আসবি??..আমার ভালোলাগবে।
.
""ছায়া হয়েও হৃদয়চোখে,,
ভালোবাসা তোকে খুঁজে নেবো!
থাকিস শুধু মন গহীনে,
তোর পাজর ছুঁয়ে নিঃশ্বাস হয়ে যাবো।। ""
.
ভালোবাসা ভালো থাকিস সবসময়,,চিরবিদায়।।
.------
মাহিনের লেখাটা আজকে সত্যিই কাঁদাতে পেরেছে সাদিয়াকে। শুধু জেনি নয় দিনা,তুর্য,হাফসা সবাই কাঁদছে।কতটা পাগল হলে এরকম পাগলের মত ভালোবাসা যায়??প্রশ্নটা সাদিয়ার মনের ভেতর বেজেই চলেছে।কিন্তু উত্তর দেওয়ার মানুষটা যে আর নেই।যেই পাগলটার পাগলামী পুরো বন্ধুমহল মাতিয়ে রাখতো তাকে ছাড়া ক্যাম্পাসটা যে ফাঁকা ফাঁকা লাগবে!!..তবে জীবন হয়তো চলেই যাবে কোন না কোনভাবে।
.
.
একবছর পর আজ আবারো ১৪ই ফেব্রুয়ারি। প্রত্যেক প্রেমিক-প্রেমিকার মত রাফি আর সাদিয়াও এক জায়গায় যাচ্ছে। সাদিয়ার হাতে একটা গোলাপ ফুল।
.
গন্তব্যে চলে এসেছে ওরা।হ্যাঁ, ওইতো!মাহিনের কবরটা দেখা যাচ্ছে।এক বছরের ব্যবধানে অনেকটা বদলে গেছে জায়গাটা।চারপাশের লতাপাতাগুলো যেন তাদের বুকের মাঝে আগলে রেখেছে পাগলটাকে।
.
সাদিয়া আস্তে করে ফুলটা রাখলো কবরের উপর।চোখের জলগুলোও আজকে বেইমানী করছেনা অঝোরে ঝরে পড়ছে।কাঁদছে রাফিও....
.
কবর থেকে বাসার উদ্দেশ্য হাঁটছে ওরা দুজন।না, দুজন বললে ভুল হবে!আরেকজন আছে ওদের সাথে তবে ছায়া হয়ে।
পথটা হয়তো বেঁকে যাবে কিন্তু ছায়াটা রয়েই যাবে আর চিৎকার করে বলবে "ভালোবাসিরে"!!
চিৎকারটা কেউ শুনবেনা ঠিকই কিন্তু সেটা প্রতিধ্বনিত হবে সেই ভালোবাসার মানুষটার হৃদয়ে যার নামে সে নিজের জীবনটাকেই লিখে দিয়েছে...!
.
উৎসর্গ:মাহিনের মত পাগলদের যারা নিজের জীবন দিয়ে ভালবাসার প্রমাণ রেখে যায়।।।।